শ্রাবণ মাস, যদিও পচা গরমটা ভাদ্রর মতো। তবে বৃষ্টি হচ্ছে যখন তখন, মাঝেসাঝে বেশ তেড়েও হচ্ছে। আজ সকালে বাইরের বারান্দায় বাগানমুখ করে বসে খাতা দেখছিলাম, তো আস্তে আস্তে আকাশ কালো হয়ে এলো, তারপর বৃষ্টি নামলো, প্রথমে টিপটিপ করে, ফের মুষলধারে। চেয়ারটাকে জলের ঝাপটা এড়াতে একটু পিছিয়ে নিয়ে বসে খাতা বন্ধ করে দিলাম। ঢের খাতা দেখেছি সারা জীবন ধরে, আরো হয়তো ঢের দেখতে হবে, এখন বৃষ্টি দেখি।
হাওয়ার ঝাপটায় বৃষ্টিটা বেশ একটা হালকা ঝাপসা পর্দা তৈরি করে দেখেছ? সে পর্দাটা আবার সরে সরে যায়। কয়েক মুহূর্তে রাস্তা ধুয়েমুছে ফাঁকা করে দিল, গাছপালা লতাপাতা দিল ভিজিয়ে। কাঠবিড়ালি, প্রজাপতি আর বিচ্ছিরি চ্যাঁচ্যা করা পাখিগুলো সব কোথায় জানি পালিয়ে গেলো, দুটো কাক বোকার মতো ডালে বসে ভিজতে লাগলো, ভুলো কুকুরটা ভয়ে ভয়ে দুবার আমায় দেখে নিয়ে বারান্দায় আমার পাশেই গুটিশুটি মেরে বসে গেল। অল্পক্ষনের মধ্যে ছাতের নালি থেকে অঝোরে ঝর্ণার মতো জল পড়তে লাগল। বাগানে শ্যাওলার বিরাট পাপোশ হয়েছে, সেটা ভিজে চুপসে উঠল। পিঁপড়েরা গুঁড়ো মাটির ঢিবি করে বাসা বেঁধেছিল, প্রানপণে মুখে করে ডিম নিয়ে পালাতে লাগল। আমি দেখছি সামনের জবা গাছের সরু ডাল বেয়ে জলের ধারা নামছে, দেখাচ্ছে যেন মুক্তোর মালা। সেই সঙ্গে মেঘ গুড়গুড় করেই যাচ্ছে, আর থেকে থেকে এমন বিদ্যুতের ঝলক যে দিনের বেলাও চমকে দিচ্ছে। এই না হলে 'গগনে ঘনঘটা শিহরে তরুলতা'? শুধু ময়ূরের হরষিত নাচটাই যা দেখতে পেলুম না! তা সেও অন্যত্র অন্যসময়ে দেখেছি। ...
এ দৃশ্য আমার অন্তত কোনদিন পুরোনো হবে না। অবিশ্যি এর থেকেও ভালো লাগে যখন রাতে শুতে যাওয়ার সময়ে বৃষ্টি নামে। মহাকবি বলেছেন 'অমৃত জিনিসটা রসের মধ্যে নেই, রসাস্বাদনের মধ্যে আছে', বড় সামান্য কথা নয়। আমরা আস্বাদন করতে শিখলাম কই? 'বৃথা খেলা, বৃথা মেলা, বৃথা বেলা গেলো বহি' ... আজ যে ভগবান সময় সুযোগ দুটোই দিয়েছেন, তার যদি সদ্ব্যবহার করতে না পারলুম তাহলে দোষটা কার?
7 comments:
কী ভাল লাগলো এই লেখাটা পড়ে, স্যার! আমি-ই যেন বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিলাম মনে হল।
And I too am just as delighted to read your comment, Swagata. Thank you. It has been said about great literature that one expresses thoughts that are intensely personal, and yet, if one manages to strike the right chord, it becomes wholly universal, something that can be appreciated and empathized with by all humanity!
দুঃখের ব্যাপারটা কি জানো? ভালো অনেকেরই লাগে, সে কথা আমি জানতেও পারি থেকে থেকে, শুধু এখানে সেটা বলে আমার মনটা খুশি করে দেওয়ার মতো সময়, ইচ্ছা, উৎসাহ খুব বেশি লোকের হয় না!
Sir, your writing was so beautiful and vivid! Raining may not be of much importance to many people. What is the matter if it is raining? But, you painted a picture with your writing. I just read out your writing to my mother and she said,"Are you reading something from Leela Majumder's works?"
Thank you very much Sir. I really enjoyed reading this.
Aishik Bandyopadhyay
Thank you, Aishik, and an even bigger and grateful thank you to your mother. What an incredible compliment!
স্যার, গত চার-পাঁচ দিন ধরে ভেবে চলেছি যে কি উত্তর দেব|আসলে এতটাই উৎফুল্ল লাগছে ভেবে যে এত এত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও আপনার মনে আছে, যাই লিখছি মনে হচ্ছে বোঝাতে পারছি না ঠিক|
মনে আছে একবার ক্লাসের মাঝে পাওয়ার কাট হয়ে যাওয়ায় আপনি আমাদের The Last Question গল্পটা বলেছিলেন|তারপর বেশ কিছুদিন সব আকাশ-পাতাল চিন্তা "Can entrophy be reversed" এ গিয়ে শেষ হতো|আপনার কাছে আরও গল্প শুনতে ইচ্ছে করে,স্যার|আপনার পরের গল্পের অপেক্ষায় রইলাম|
Dear Sir,
As I read this post, I was reminded of Wordsworth's Daffodils and Lines Written in Early Spring: the sharp observation, the vivid description, and then the reflection at the end. I was also pleased that although it's been more than two decades since my last formal class in Bengali (from Mrs. Nita Banerjee), I was able to read most of the post, although haltingly, like a novice, and understand more of it than I didn't. It's also ignited a wish to start reading Bengali again.
Sincerely
Nishant.
I, for my part, am just as surprised as delighted, Nishant!
Post a Comment